রেসিপি, লইট্টা শুঁটকি রেসিপি

লইট্টা হুঁনীর পুতা বায়ুনের দোলমা

লইট্টা হুঁনীর পুতা বায়ুনের দোলমা (1)

Shutkiz নিবেদিত

 Nowshad Foujiya Khanam

আসসালামু আলাইকুম, সবাই কেমন আছেন? আমি চট্টগ্রামের মেয়ে এবং বউ। ছোট কাল থেকে বেড়ে উঠেছি সবুজ শ্যমলা গ্রামীন পরিবেশে। কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে আমাদের বাড়ি হওয়ায় ছোট থেকে দেখে আসছি শুকটীর মাছাঙ। আমাদের গ্রামে রয়েছে বেশ কয়েকটি শুটকীর মাচাঙ (প্রসেসিং জোন)

তাই বড় হতে হতে শুটকীর সাথে একটা আলাদা ভালবাসা জমে উঠেছে। শুটকী হচ্ছে গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। চট্টগ্রামের মানুষ শুটকি দিয়ে পেট পুরে খাবার খেতে পারে। আমিও শুটকী পেলে অন্য খাবারের কথা ভূলে যায়। ধন্যবাদ জানাই Plan B কর্তৃপক্ষকে এমন একটি আয়োজন করে বর্তমান প্রজম্মকে শুটকীর সাথে নতুন পরিচয় করে দেওয়ার জন্য শুটকী দিয়ে নানাপদের রান্না হয়ে থাকে। আমি আজ এসেছি আমার করা একটি নিজস্ব রেসিপি নিয়ে।

যার নাম “লইট্টা হুঁনীর পুতা বায়ুনের দোলমা”

আমি একজন গৃহিণী হয়ে বলতে পারি আমার রেসিপি দিয়ে ভাত খেলে আপনি অন্য জগৎতে হারিয়ে যাবেন। বাসসয় হঠাৎ গেস্ট তখন মাংস পোলাউ না দিয়ে যদি এই রেসিপি রান্না করে দেন তাহলে উনি আপনার রান্নার ভক্ত হবেন অবশ্যই। আমার এই রেসিপির মুল উপকরণ লইট্টা শুটকি এবং পুতা বায়ুন খুবই সহজলভ্য। তাই আপনারা একটি বারের জন্য হলেও আমার রেসিপি নিজেরা রান্না করে দেখতে পারেন!!

আমার রেসিপি নাম = “লইট্টা হুঁনীর পুতা বায়ুনের দোলমা”

লইট্টা হুঁনীর পুতা বায়ুনের দোলমা (1)

উপকরণ

  • লইট্টা শুটকী = ১৫০ গ্রাম
  • পুতা বায়ুন = ৬ টা (মাঝারি আকৃতির)
  • সরিষার তেল =২৫০ গ্রাম
  • পেঁয়াজ কুঁচি = ২ কাপ
  • রসুন কুঁচি =২ কোয়া
  • মরিচ গুঁড়ো = ৪ চা চামচ
  • হলুদ গুঁড়ো = ২ চা চামচ
  • লবণ = স্বাদমত
  • টমেটো = ২ টি (কিউব করে কাটা)
  • সরিষা পেস্ট = ২ চা চামচ
  • কাঁচামরিচ পেস্ট = ২ চা চামচ
  • কাঁচামরিচ = ৪ টি (ফালি করা)
  • ধনে পাতা = ১/২ কাপ

উপকরন প্রক্রিয়াজাতএবং রন্ধন প্রণালী

১ম ধাপ – আধা কেজি ফুটন্ত গরমপানিকে রুম টেম্পারেচারে এনে শুটকিগুলোকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে ফুটানো পানিতে। এই ৩০ মিনিটের মধ্যে বেগুনগুলোকে দোলমার মত করে তৈরি করব। দোলমা তৈরি করতে প্রথমে ধারালো একটি ছুরি নিয়ে মুখের অংশ গোল করে কেটে ফেলে দিব।

লইট্টা হুঁনীর পুতা বায়ুনের দোলমা (1)

এরপর বেগুনের মাঝের অংশগুলো বের করার জন্য একটি চা চামচের সাহায্য হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বের করে টেনে আনব। মনে রাখতে হবে যে, মাঝের অংশগুলো ফেলে দেওয়া যাবে না। ঐ অংশগুলো ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পারফেক্ট একটা শেপ আসার পর বেগুনগুলোকে ধুয়ে তাতে এক চিমটি মরিচ এবং হলুদ গুঁড়ো, সাথে একটু লবন দিয়ে মাখিয়ে নিব। এর মধ্যে চুলায় প্যান বসিয়ে ২৫০ গ্রাম সরিষা তেল গুলো ঢেলে দিব। চুলার আগুন থাকবে মিডিয়াম হাই হিটে। তেল গরম হয়ে আসলে বেগুনগুলো এ পাশ ও পাশ ভালভাবে অনেকক্ষণ ভেজে নিব।

বেগুনগুলো ভাজতে আমরা শুটকিগুলো প্রসেসিং করে নিব। খুব ভাল ভাবে অনেকক্ষণ ধুয়ে নিব। যখন শুটকী গুলো একটু চকচকে ভাব আসবে, তখন ধরে নিব শুটকীগুলো পরিষ্কার হয়ে গেছে। এরিমধ্যে শুটকীগুলো অনেকটা নরম হয়ে যাবে। তখন আমরা শুটকীর মাঝের কাঁটাগুলো ফেলে দিব। তারপর আরেকটু ধুয়ে নিব। এরপর একটা কাচির সাহায্যে টুকরো করে কেটে নিব।

তাহলে, আমাদের এতক্ষণে বেগুনগুলো ভাজা হয়ে গেছে এবং শুটকীগুলো প্রসেসিং করা হয়ে গেছে!!
এবার যাব আমরা আসল রান্নায়, বেগুন ভাজার পর যে অবশিষ্ট তেলগুলো থাকবে তার মধ্যে, প্রথমে রসুন কুচিগুলো দিয়ে একটু হালকা বাদামি করে নিব, এরপর পেঁয়াজ কুচি গুলো দিব। পেয়াজ কুচিগুলো একটু হালকা বাদামি হয়ে আসলে মরিচগুঁড়ো এবং হলুদগুঁড়ো দিয়ে দিব। অল্প একটু পানি দিয়ে কষিয়ে নিব। কষানোর পর টুকরো করা লইট্টা শুটকী দিয়ে দিব। প্যানে ডাকনা দিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট রান্না করব। তখন চুলার আঁচ রাখব মিডিয়াম ল্লো হিটে। ১৫ মিনিট পর ডাকনা তুলে কিউব করে কাটা টমেটো গুলো দিয়ে দিব। তখন ২ চা চামচ সরিষা পেস্ট এবং ২ চা চামচ কাচাঁমরিচ বাটা দিয়ে দিব!

লইট্টা হুঁনীর পুতা বায়ুনের দোলমা (1)

যদি দেখে পানির প্রয়োজন তাহলে অল্প একটু পানি দিতে হবে (এটা আপনাকে চোখের ইশারায় বুঝে নিতে হবে)। এভাবে আরও ১০ মিনিট রান্না করব। ১০ মিনিট পর ফালি করা কাঁচামরিচ দিয়ে দিয়ে দিব। এভাবে আর ২ মিনিট রান্না করব। ২ মিনিট চুলা বন্ধ করে দিব। এভাবে প্রায় ৫ মিনিট প্যানের ঢাকনা খুলব না। কারন চুলার তাপে রাখলে রান্নাটাকে আরো সুস্বাদু করে তুলে। ৫ মিনিট পর চারপাশে ধনেপাতা ছিটিয়ে দিব।

এবার একটি ডিসে নিয়ে বেগুনের দোলমার ভিতরে, একটি চামচের সাহায্য শুটকীর পুর দিয়ে দিয়ে দিব। সার্ভিং ডিসে নেওয়ার পর আপনি চাইলে বেগুনের উপর পুদিনা বা ধনেপাতা দিয়ে একটু হালকা সাজিয়ে নিতে পারেন। এতে বেগুনোর দোলমাটি দেখতে খুবই আকষর্নীয় হবে। বেগুনের শুটকীর পুর দেওয়ার পর বাকি শুটকীর পুরগুলো সার্ভিসিং ডিসের চারপাশে দিয়ে দিব।
ব্যস হয়ে গেলো আমাদের “লইট্টা হুঁনীর বেগুনোর দোলমা রেসিপি”


আশা করি! আমার এই নিজস্ব রেসিপিটা সকলের খুব পছন্দ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *